আইআইটি গুয়াহাটি এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)-এর গবেষকরা একটি আশ্চর্যজনক এবং অভাবনীয় বিষয় আবিষ্কার করেছেন। যেটি এক্স-রে পালসার সম্পর্কিত আমাদের পূর্বের সমস্ত ধারণাকে পরিবর্তিত করতে পারে। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন প্রথম পরিচিত গ্যালাক্টিক আলট্রালিউমিনাস এক্স-রে নির্গমকারী পালসার,Swift J0243.6+6124 । এই পালসার থেকে নির্গত এক্সরেগুলি একটি অপ্রত্যাশিতভাবে কম পোলারাইজেশন স্তর প্রদান করছে। এই পালসার আমাদের মহাকাশীয় ছায়াপথের মধ্যে অবস্থিত আছে। এটির এক্সরে গুলিতে মাত্র 3 শতাংশ পোলারাইজেশন দেখা যাচ্ছে, যেটি বর্তমান তত্ত্বের ভিত্তিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে অনেক কম।
2017 এবং 2018 সালে নাসার সুইফট মহাকাশযানটি, একটি তীব্র এক্স-রে উদগীরণ সময়ে Swift J0243.6+6124 কে প্রথম শনাক্ত করে। তখন থেকেই এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যয়নের বিষয় হয়ে উঠেছিল,যারা ক্রমাগত এই অত্যন্ত উজ্জ্বল এক্স-রের উৎসের (ULXs) প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করছেন। ULXs টি সাধারণত মধ্যবর্তী ভরের ব্ল্যাক হোলের সাথে সম্পর্কিত কিন্তু অন্যদিকে মনে করা হচ্ছে Swift J0243.6+6124 টি পালসারের সাথে যুক্ত হতে পারে।
পালসার হলো এক ধরনের নিউট্রন স্টার। যেগুলি বড়ো কোনো নক্ষত্রের অংশ বিশেষ, যারা নিজেদেরই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভেঙ্গে পড়ে গিয়েছে। এই বস্তুগুলি অত্যন্ত ঘন হয়ে থাকে। এমনকি করে করা হচ্ছে এগুলি সূর্যের সমান ভর বহন করে থাকে। তবে মহাকাশে এগুলি একটি শহরের আকারের সঙ্কুচিত হয়ে থাকে।
গবেষকরা 2023 সালে, নাসার ইমেজিং এক্স-রে পোলারিমেট্রি এক্সপ্লোরার (IXPE), নিউট্রন স্টার ইন্টিরিয়র কম্পোজিশন এক্সপ্লোরার (NICER) এবং নিউক্লিয়ার স্পেকট্রোস্কোপিক টেলিস্কোপ অ্যারে (NuSTAR) মিশনের ডেটা ব্যবহার করে সক্রিয় পর্যায়ে Swift J0243.6+6124 থেকে নির্গত এক্স-রে গুলির পোলারাইজেশনটি নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন।
এই অনুসন্ধানটির মাধ্যমে প্রকাশ হয় যে, এক্স-রেগুলি মাত্র 3% পোলারাইজড হয়েছিল। যেটি বর্তমান মডেলগুলির দ্বারা ভবিষ্যৎবাণী করা স্তরের চেয়ে অনেক কম।
এই আবিষ্কারটি দীর্ঘদিন ধরে গৃহীত হওয়া,বাইনারি সিস্টেমে এক্সরেগুলির নিউট্রন স্টারদের আশেপাশে অবস্থিত শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রের সমন্বয়ে তাদের আচরণ সম্পর্কিত ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করে।
ISRO এর অধিনস্ত ডাঃ অনুজ নন্দী, এই আবিষ্কারটি সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন যে, Swift J0243.6+6124 তে কম পোলারাইজেশন দেখা গেছে, এটি বর্তমানে নিউট্রন স্টারদের বিকিরণ আচরন সংক্রান্ত যে তত্ত্বগুলি আছে , সেগুলিকে পুনর্মূল্যায়নের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, IXPE মিশনটি এই কম পোলারাইজেশন স্তরগুলি শনাক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মনে করা হচ্ছে, এটি নির্গত এক্স-রে পালসগুলির সাথে পরিবর্তনশীল।
অন্যদিকে গুয়াহাটি আইআইটি এর প্রফেসর সান্তব্রতা দাসও এই আবিষ্কারটির গুরুত্ব সম্পর্কে মন্তব্য পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে ,অপ্রত্যাশিতভাবে কম পোলারাইজেশন বোঝায়, আমাদের নিউট্রন স্টারদের আশেপাশে অবস্থিত চৌম্বক ক্ষেত্র এবং এক্স-রে নির্গমনের নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াগুলিকে আধুনিক করা প্রয়োজন।
এটি আমাদের ভবিষ্যতে গ্যালাক্সি এবং তার বাইরের এই ধরনের এক্স-রের উৎস বিষয় সম্পর্কিত গবেষণার ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
এই মহাকাশীয় ঘটনাটি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে এক নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞানী প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন কার্যে লিপ্ত হয়ে আছেন সেখানে হঠাৎ করে এই অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার তাদের গবেষণার কার্যে আরো উৎসাহ দেবে বলে মনে করা হচ্ছে এবং মহাকাশীয় জটিল শক্তিগুলি সমন্ধে গভীর ভাবে পর্যালোচনার জন্য অনুপ্রেরণা দেবে।
প্রযুক্তির সাম্প্রতিক খবর আর রিভিউস জানতে লাইক করুন আমাদের Facebook পেজ অথবা ফলো করুন Twitter আর সাবস্ক্রাইব করুন YouTube.
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন